১৯৪৭ সালের দেশভাগে জন্ম নেওয়া নতুন দেশ পাকিস্তান, নতুন দেশের মুদ্রা থেকে ডাকটিকেট, মানিঅর্ডার থেকে শুরু করে নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় সরকারি সব কাগজে বাংলাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাকে এভাবে দূরে সরিয়ে রাখায় চাপা কষ্ট বুকে নিয়েই গণপরিষদে একটি সংশোধনী প্রস্তাব এনেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত; Source: bonikbarta.net

১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে, পাকিস্তানের বয়স তখন ছয়মাসের ঘরে, করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে প্রস্তাব করা হয়েছিলো, “ইংরেজির সঙ্গে উর্দুও পাকিস্তান গণপরিষদের সরকারি ভাষা হিসেবে বিবেচিত হবে”। ধীরেন্দ্রনাথের আনা সংশোধনীতে প্রস্তাব করা হয়েছিলো, বাংলাকেও পরিষদের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য।
ধীরেন্দ্রনাথ বাঙ্গালী এবং মাতৃভাষার প্রতি তার সহজাত আবেগ থাকা স্বাভাবিক। পাকিস্তানের গণপরিষদে দাঁড়িয়ে যে তিনি সেই আবেগের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েই তিনি বলেছিলেন,
“So sir, I know I am voicing the sentiments of the vast millions of our state and therefore Bengali should not be treated as provincial language. It should be treated as the language of the state.”
তবে গণপরিষদের সেই অধিবেশনে তার বক্তব্যে যতটা না আবেগের প্রতিফলন ছিলো বরং তার চেয়ে বেশি ছিলো যুক্তির ধার। পাকিস্তানের ছয় কোটি নব্বই লক্ষ জনগণের মধ্যে চার কোটি চল্লিশ লক্ষই যে বাংলা ভাষাভাষী এবং পাকিস্তানের রাজকার্যে তাদের ভাষাকে বাদ দিলে সমস্যার সৃষ্টি হবে সেটিও তার বক্তব্যে পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তার বক্তব্য থেকেই প্রথম দাবি ওঠে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার। বাংলার পথে প্রান্তরে ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতাকেই অভিজাত গণপরিষদ সদস্যদের সামনে তুলে ধরেছিলেন তিনি। পূর্ব বাংলার একজন মানুষ সাধারণ পোস্ট অফিসে মানিঅর্ডার করতে গেলেও যে উর্দু ভাষায় লিখিত ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খান এই কথাটিই ধীরেন্দ্রনাথের বক্তব্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছিলো সেদিন। খাম-পোস্টকার্ডের ভেতরে বন্দী থাকা ছাড়া বাংলার যেন আর কোনো গতি নেই।