প্রেমে প্রতারিত
হয়ে বা স্বামীর কাছে প্রতারিত হয়ে আইনি প্রতিকার চাইতে আসা প্রায় মেয়েদেরই
একটা কমন ডায়লগ আছে দেখেছি, "দিদি ও আগে আমি ছাড়া কিছু জানতোই না জানেন?
আর এখন চা খাওয়া হয়ে গেছে ভাঁড় ফেলে দিয়েছে, বুঝলেন তো কী বললাম? আর ফিরেও
দেখে না"!
আমার পা থেকে মাথা অবধি দপ করে আগুন ধরে
যায় এই কথা শুনে। ইচ্ছে করে ঠাটিয়ে একটি চড় কষাই, মেয়েটি ছিটকে পড়ুক নীচে!
দাঁত কিড়মিড় করে বলি হ্যাঁ রে গর্দভ, বুঝেছি সবই! এগুলোর কোনোটাই করা
হয়না তবে মেয়েটিকে থামিয়ে অতি অবশ্যই দিই। বলি ওহে মেয়ে আগে তুমি নিজের
মূল্য বুঝতে শেখো। নিজেকে অসম্মান করাটা বন্ধ করো! নিজেকে চায়ের ভাঁড়ের
চেয়ে একটু উৎকৃষ্ট কিছু ভাবতে শেখো!
সস্তার থার্ডক্লাস সব বাংলা সিনেমায় বা
বইপত্রে স্বামী বা প্রেমিকের সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়ে যাবার পর মেয়েদের
চায়ের ভাঁড়/ এঁটো শালপাতা ইত্যাদির সঙ্গে তুলনার প্রচুর প্রচুর উদাহরণ
রয়েছে। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির ক্ষেত্রে তো বটেই! সেই পোসেনজিতের কোনো এক
ছবিতে যেনো ছিলো না, এঁটো ফুল না বাসি ফুল কী একটা যেনো! দেবতার পুজোয়
লাগেনা! তো সেইসব দেখে দেখে বেড়ে ওঠা, ব্রেনওয়াশড মেয়েগুলোর মনে এর বেশি
আর কী ফীলিং থাকবে! এরা নিজেদেরকে ব্যবহৃত, এঁটো, ডিসপোজেবল ছাড়া আর কিছু
ভাবতেও শেখে না অগত্যা! কী পরিকল্পিত মগজধোলাই জনমভরের অসম্মান আর
আত্মগ্লানি বয়ে নিয়ে বেড়ানোর জন্য!
যারা বিক্রি হয়ে যান, প্রতারিত হন,
অপছন্দের লোকের গলায় মালা দিতে রাজী হন বাধ্য হয়ে, তাঁদের ভেতরের গ্লানি
আমি বুঝি। কিন্তু তাই বলে নিজেকে একটা মাটির ভাঁড় বা এঁটো শালপাতা ভাবতে
হবে কেনো? এতো তুচ্ছাতিতুচ্ছ ভাবতে হবে কেনো? ব্যবহৃত ভাবতে হবে কেনো?
সেলফ এস্টিমেশান চূড়ান্ত তলানির পর্যায়ে না পৌঁছলে এইসব ধারণা আসতে পারে?
আর আত্মবিশ্বাস ভেতর থেকে আসে, ওটা না থাকলে লড়াইটা কিসের ভিত্তিতে হবে?
হয় কিন্তু, ক্রমাগত ভোক্যাল টনিকে
অনেকেরই খানিকটা আত্মবিশ্বাস ফেরে। ভাবতে থাকে তারা। আমার খুব প্রিয়
মানুষ, বিখ্যাত মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কয়েকটি লাইন মনে পড়ে,
আমারও খুব প্রিয় লাইনগুলো, আমিও ভাবি প্রতিটি মেয়ের মানসিকতা যেনো এই
ধাঁচেই গড়া হয়, নিজেদের যেনো আগে চায়ের ভাঁড়ের বদলে গোটা মানুষ ভাবতে শেখে
মেয়েরা...
"গোপনে ছুঁয়েছো বলে আমার গোপনতম স্থান
তোমার অধিকৃত, এ তোমার ভুল অনুমান।
যতদূর চোখ যায়, স্পর্শ গেছে ঠিক ততোখানি,
করায়ত্ত নয় কারো, বাকিটা আমার রাজধানী "।
তোমার অধিকৃত, এ তোমার ভুল অনুমান।
যতদূর চোখ যায়, স্পর্শ গেছে ঠিক ততোখানি,
করায়ত্ত নয় কারো, বাকিটা আমার রাজধানী "।
লেখক: শিলা চক্রবর্তী
No comments:
Post a Comment