"মানুষের মরণ আমাকে বড় আঘাত
করে না, করে মনুষ্যত্বের মরণ দেখিলে।"
-- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বাংলা সাহিত্যের অপরাজেয় কথাশিল্পী বলা হয় তাকে। ছোটবেলায় একবার মাথায় একটা ফোঁড়া হওয়ায় সব চুল ফেলে দেয়া হয়। সেই থেকে সবাই তাকে ডাকতো ‘ন্যাড়া’ বলে। নামটি শুনে মনে পড়েই যায় ‘বিলাসী’ গল্পের কথা। পাঠ্যবইয়ের বদৌলতে প্রায় সবাই-ই পড়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ের সকল গল্পের ঝুলি নিয়ে পাঠকদের কাছে যে গল্প বলেছিলো, সে কথকের নামও কিন্তু ছিল ‘ন্যাড়া’। এই দুজন ব্যক্তিই এক। আজ আমরা বলছি বিলাসী গল্পের কথক শরৎচন্দ্রের কথা। পুরো নাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি ব্যক্তিজীবনেও সাপুড়েদের মতো পটু ছিলেন বিষধর সাপ ধরার ক্ষেত্রে।
গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ সব জায়গায়ই পাঠককূলে সমাদৃত এক সাহিত্যিক। রোম্যান্টিক ট্র্যাজেডি কিংবা সমাজ সংস্কার, আবহমান বাংলার আত্মকথা কিংবা স্যুট-ব্যুট পরা কোনো বিলেতফেরত নায়ক, আত্মত্যাগে নিজেকে বিলীন করে দেয়া নায়িকা কিংবা প্রতিবাদে মাথাচাড়া দেয়া কোনো অরক্ষণীয়া। শরৎচন্দ্র এদের সবাইকেই খুব গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন আমাদের কাছে। নারীর প্রতি বিশেষ একধরনের স্থান থাকতো শরতের গল্প-উপন্যাসে, তার সমসাময়িক অন্যদের মতো নারীকে তিনি শুধু অবলা বলেই রেখে দেননি, তাদের মুখে বুলি ফুটিয়েছেন, কিছুটা হলেও তাকে দাঁড় করিয়েছেন সমাজের স্রোতের বিরুদ্ধে। রবি ঠাকুরের হৈমন্তী যখন স্বামী সংসার আর যৌতুকের পরাকাষ্ঠার বলি হয়, শরতের বিলাসী তখনো লড়ে যাচ্ছে মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু জয়ে।
পরিবার, বন্ধু, কাউকে কিছু না জানিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বর্মা (এখন মায়ানমার) পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু জাহাজ বর্মার রাজধানী রেঙ্গুনে ঢোকার আগেই তাঁকে যেতে হল ‘কোয়ারান্টিন’-এ। সেই সময় কোনও বন্দরে সংক্রামক ব্যাধি দেখা দিলে সেখান থেকে জাহাজ অন্য বন্দরে প্রবেশের আগে জাহাজকে বন্দর থেকে কিছুটা দূরে অন্য এক জায়গায় কয়েক দিন রাখা হত। একেই বলা হয় কোয়ারান্টিন। রেঙ্গুন তখন প্লেগে ভয়ংকর বিপর্যস্ত। বর্মার সাহেবসুবোরা ধরেই নিয়েছিল, প্লেগ ছড়িয়েছে তৎকালীন বম্বের বন্দরে জাহাজে জাহাজে যে কুলিরা কাজ করে, তাদের থেকে। রেঙ্গুন ঢোকার আগেই কুলি আর ডেকের অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে শরৎচন্দ্রও গেলেন আটকে। এক জঙ্গলঘেরা জায়গায় কাটালেন নয় নয় করে সাত দিন।
অবশেষে ঢোকা গেল রেঙ্গুন শহরে। হাত একেবারে খালি। সে সময় রেঙ্গুন শহরে একটিমাত্র বাঙালি হোটেল—‘দাদাঠাকুরের হোটেল’। সেখানে থেকেই শরৎচন্দ্র তাঁর মেসোমশাই অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ঠিকানা জেনে শেষমেশ পৌঁছলেন তাঁর কাছে। অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন রেঙ্গুনের নামকরা উকিল। শরৎচন্দ্র সাত দিন আটকে ছিলেন শুনে মেসোমশাই বললেন, ‘‘তুই আমার নাম করতে পারলি না? আমার নাম করে কত লোক পার হয়ে যায়, আর তুই পড়ে ছিলিস করনটিনে!’’
বর্মি ভাষা শিখে শরৎচন্দ্র যদি বর্মায় ওকালতি করে তা হলে তাকে আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে না, এ কথা শরতের পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায়কে অঘোরবাবু আগেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু শরতের আর উকিল হওয়া হল না। কারণ, তিনি বর্মি ভাষার পরীক্ষাতেই পাশ করতে পারলেন না।
উকিল না হয়েও প্রায় তেরো বছর তিন মাস বর্মায় কাটিয়ে ফেললেন শরৎচন্দ্র। বৌদ্ধ ভিক্ষুর বেশে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন উত্তর বর্মার অলিতে-গলিতে। মিশেছিলেন চোর, ডাকাত, খুনি... হাজারও মানুষের সঙ্গে। বিচিত্র সেই সব অভিজ্ঞতা!
বর্মার নানান জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল সরকারি কন্ট্রাক্টর গিরীন্দ্রনাথ সরকারের। পেশায় সরকারি চাকুরে, কিন্তু তাঁর নেশা ছিল ভ্রমণ। শরৎচন্দ্র বর্মি ভাষা একেবারেই বুঝতে পারতেন না। গিরীনবাবুই তাঁর দোভাষীর কাজ করতেন। এক দিন দু’জনে ঘুরতে বেরিয়েছেন। রাস্তায় দেখলেন, মাছ কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে এক দল বর্মি মেয়ের সঙ্গে কিছু লোকের ঝগড়া হচ্ছে। গিরীনবাবুকে জিজ্ঞেস করে শরৎচন্দ্র জানলেন, বর্মায় মরা মাছের খুব কদর। জ্যান্ত মাছ মেরে খাওয়া নাকি ওদের কাছে অধর্ম। ব্যাপারটা জেনে শরৎচন্দ্র বলেছিলেন, ‘‘তা হলে দেখছি একদিন গুচ্ছের মাছ মেরে ওদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে।’’ উত্তরে গিরীনবাবু বললেন, ‘‘উহুঁ, ওরা এমনি এমনি নেওয়ার পাত্র নয়, যা নেবে পয়সা দিয়ে নেবে। আর যদি বোঝে মতলব খারাপ, সঙ্গে সঙ্গে ফনানে-ছা। মানে জুতোপেটা!’’
শোনা যায়, প্রণয়ঘটিত ব্যর্থতার যন্ত্রণা ভুলতে প্রথম জীবনে হাতে পয়সা পেলেই শরৎচন্দ্র বেজায় মদ্যপান করতেন। মাঝে মাঝে মদ খেয়ে বেহুঁশও হয়ে পড়তেন। এক দিন শরৎচন্দ্রের বাড়িতে মদ শেষ। কী করা যায়? গভীর রাতে এক বাঙালি বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে চললেন তাদেরই পরিচিত এক বর্মি বন্ধুর বাড়ি মদ আনতে। বর্মি বন্ধুটির হার্টের অসুখ থাকায় তাঁর মদ খাওয়া নিষেধ ছিল। অনেক অনুরোধের পর বন্ধুর স্ত্রী মদের বোতল বের করে দিলেন। এ দিকে শরৎ ও অন্য বন্ধুদের কী খেয়াল হল, তাঁরা মদ খেতে বসে পড়লেন ওই বর্মি বন্ধুর বাড়ির বারান্দাতেই। মদ খাবে না, এই শর্তে সেও আসরে যোগ দিল। স্ত্রীর নজরদারিতে গোড়ায় মদ না খেলেও, স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়লে বন্ধুদের অনুরোধে যথারীতি মদের গ্লাসে চুমুকও দিয়ে ফেলল। তার কিছু ক্ষণ পরেই হঠাৎ বুক চেপে ধরে বিকট আর্তনাদ, এবং মৃত্যু!
এর পর শরৎচন্দ্র মদ ছে়ড়ে আফিম ধরেছিলেন। যে নেশা তাঁর জীবনের শেষ দিন অবধি ছিল। ভাল গান গাইতেন, শরতের গানে মুগ্ধ হয়ে কবি নবীনচন্দ্র সেন তাঁকে ‘রেঙ্গুন রত্ন’ উপাধি দিয়েছিলেন।
রেঙ্গুনের যৌনপল্লিতেও নাকি শরৎচন্দ্রের যাতায়াত ছিল। এক বার একটি মেয়ের কাছে গিয়ে দেখলেন, তার বসন্ত রোগ হয়েছে। তা দেখে বন্ধুরা সকলে ভয়ে পালিয়ে গেলেও শরৎচন্দ্র কিন্তু পালালেন না। পয়সা খরচ করে ডাক্তার ডাকলেন, মেয়েটির চিকিৎসা করলেন। এত কিছু করা সত্ত্বেও মেয়েটি বাঁচল না। শরৎচন্দ্র মেয়েটির সৎকারও করেছিলেন।
রেঙ্গুনে বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন লোয়ার পোজনডং-এর এক মিস্ত্রিপল্লিতে। সেখানকার মানুষজনের আপদে-বিপদে সাহায্য করা, অসুখে হোমিয়োপ্যাথি ওষুধ দেওয়া, সব মিলিয়ে শরৎচন্দ্র হয়ে উঠেছিলেন মূর্তিমান মুশকিল আসান। শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয়তা দেখে বন্ধু গিরীন মিস্ত্রিপল্লিকে মজা করে বলতেন ‘শরৎপল্লি’।
এই মিস্ত্রিপল্লিতেই এক অসহায় মেয়েকে সাহায্য করতে গিয়ে শরৎচন্দ্র বিপদে পড়েছিলেন। ওই পল্লিতে থাকত এক দম্পতি। বছরখানেক পর মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়লে যুবকটি তাকে ছেড়ে পালায়। মেয়েটির প্রসব বেদনা উঠলে স্থানীয় লোকজন গেলেন শরৎচন্দ্রের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করতে। শরৎচন্দ্র সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার ডাকলেন। সন্তান প্রসবের পর মেয়েটির দুঃখের কাহিনি শুনলেন ও যুবকটির খোঁজে লোক লাগালেন। খোঁজ পাওয়ার পর শরৎচন্দ্র লোক মারফত যুবকটিকে বলে পাঠালেন, সে যেন তার স্ত্রী ও সন্তানকে গ্রহণ করে। যুবকটি কিন্তু মেয়েটিকে তাঁর স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করল। তারা যে বিবাহিত ছিল না সেটাও জানা গেল। ছেলেটি তখন অন্য এক জায়গায় সংসার পেতেছে।
শুনে বেজায় চটলেন শরৎচন্দ্র। অসহায় মেয়েটিকে বললেন, যুবকের বিরুদ্ধে খোরপোশের মামলা করতে। মামলা কোর্টে উঠলে যুবকটি বলল, মেয়েটির সঙ্গে শরৎচন্দ্রের সম্পর্ক আছে। সদ্যোজাত সন্তানটি তার নয়, শরৎচন্দ্রের। আর সন্তান প্রসবের সময় সে কারণেই নাকি শরৎচন্দ্র খরচাপাতি করে ডাক্তার আনিয়েছিলেন। বিচারক সব শুনে ডাক্তারের বয়ান নিলেন। ডাক্তার জানালেন, শরৎচন্দ্র তাঁকে ডাকলেও প্রসবের সময় মেয়েটি তার স্বামীর নাম, মানে ওই যুবকটির নামই করেছিল। যে নাম তার ডায়েরিতে লেখা আছে। বিচারক সিদ্ধান্ত শোনালেন। যুবকটি খোরপোশ দিতে বাধ্য হল।
রেঙ্গুনের বাড়িতে ছিল তাঁর নিজস্ব একটি লাইব্রেরি। কাঠের এই বাড়িটি তিনি কিনেছিলেন এক ইউরোপীয় সাহেবের কাছ থেকে। এক বার আগুন লাগল সেই বাড়িতে। পুড়ে ছাই হয়ে গেল সব কিছু। তার মধ্যেই ছিল ‘চরিত্রহীন’ উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি এবং তাঁর নিজের আঁকা বেশ কিছু পেন্টিংও। সব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে শরৎচন্দ্র পথে এসে দাঁড়ালেন, কুকুর ‘ভেলি’ আর পোষা কাকাতুয়া ‘বাটুবাবু’র সঙ্গে।
আক্রান্ত হলেন রোগে। হাত-পা ফুলে যাচ্ছে, যন্ত্রণা। অবস্থা এমন, প্রায়-পঙ্গু পা নিয়ে চলাফেরাই করতে পারেন না। ডাক্তার জানালেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণেই এই দশা, বর্মা ছাড়লে তবেই এ রোগ সারবে। এ দিকে চিকিৎসার জন্য ছুটি চাওয়া নিয়ে অফিসে বড়সাহেবের সঙ্গে বচসা বাধল। শরৎচন্দ্র খুব উত্তেজিত হয়ে তেড়ে গেলেন সাহেবের দিকে। বাঙালি কেরানির ঔদ্ধত্য দেখে সাহেব স্তম্ভিত!
সে দিনই কাজে ইস্তফা দিলেন শরৎচন্দ্র। ফিরলেন দেশে। দেশে ফিরে চেহারায় বদল আনলেন। রেঙ্গুনে থাকার সময় দাড়ি রেখেছিলেন। ঘন ঘন সিগারেট খেতেন। খেলতেন দাবা। জীবনচর্চায় ছিল ফরাসি বোহেমিয়ানিজমের প্রভাব। তখন তাঁর গুরু ফরাসি সাহিত্যিক এমিল জোলা। বর্মা থেকে ফেরার কয়েক বছর পর দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে ফেললেন। শুরু হল আর এক নতুন জীবন।
বাংলা কথাসাহিত্যে ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শরৎচন্দ্র পাঠ করেন নি এমন শিক্ষিত বা মোটামুটি লেখাপড়া জানা বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। ব্যাপারটা আরও একটু পরিষ্কার করে লেখা যেতে পারে, পৃথিবীর যে কোনো বাংলাভাষীর সঙ্গে শরৎচন্দ্রের পরিচয় হয়েছে; না হয়ে উপায় নেই। এতো গল্প, এতো উপন্যাস আর এতো আশ্চর্য চরিত্র তিনি তৈরি করেছেন- সেইসব চরিত্র বা আখ্যান পাঠ না করে এড়িয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব, যে কোনো বাঙালির পক্ষে।
কবিগুরু যথার্থ বলেছিলেন "শরৎচন্দ্রের সৃষ্টি ডুব দিয়েছে বাঙালির হৃদয়রহস্যে| সুখে দুঃখে মিলনে বিচ্ছেদে সংঘটিত বিচিত্র সৃষ্টির তিনি এমন করে পরিচয় দিয়েছেন বাঙালী যাতে আপনাকে প্রত্যক্ষ জানতে পেরেছে।"
রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে শরৎচন্দ্রের মৃত্যুসংবাদ শুনে ইউনাইটেড প্রেসের প্রতিনিধিকে বলেন-‘ যিনি বাঙালীর জীবনের আনন্দ ও বেদনাকে একান্ত সহানুভূতির দ্বারা চিত্রিত করেছেন, আধুনিক কালের সেই প্রিয়তম লেখকের মহাপ্রয়াণে দেশবাসীর সঙ্গে আমিও গভীর মর্মবেদনা অনুভব করছি’।
এর কয়েকদিন পরে ১২ই মাঘ তারিখে কবি আবার শরৎচন্দ্রের মৃত্যু সম্পর্কে এই কবিতাটি লিখেছিলেন-
যাহার অমর স্থান প্রেমের আসনে।
ক্ষতি তার ক্ষতি নয় মৃত্যুর শাসনে।
দেশের মাটির থেকে নিল যারে হরি
দেশের হৃদয় তারে রাখিয়াছে বরি।
শরৎচন্দ্র সৃষ্ট রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত-ইন্দ্রলাল, রমা-রমেশ, সব্যসাচী, বড়দিদি, সতীশ-সাবিত্রী, বিলাসী সহ আরো বহু অমর চরিত্র বাংলা সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধতর। তার শক্তিশালী লেখনী ও সমাজকদে ভিন্নভাবে দেখবার চোখ সাহিত্যজগতে যুক্ত করেছে বহু কালজয়ী রচনা, যার আবেদন পাঠকসমাজে বছরের পর তাকে জীবিত রাখবে একজন অপরাজেয় কথাশিল্পীর পরিচয়ে।
মনুষ্যত্বের মরণ যাকে আহত করত নিয়ত , আজন্ম অসাম্প্রদায়িক,নারীর প্রতি বৈষম্যকে আঘাত করেছেন তীব্রভাবে , বাঙালির চিরন্তন আবেগ , প্রেম , বেদনা, আটপৌরে জীবনের অনিন্দ্য কথাকার শরৎবাবু...
লেখক: লুৎফুল কবির রণী, কবি ও প্রাবন্ধিক
করে না, করে মনুষ্যত্বের মরণ দেখিলে।"
-- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বাংলা সাহিত্যের অপরাজেয় কথাশিল্পী বলা হয় তাকে। ছোটবেলায় একবার মাথায় একটা ফোঁড়া হওয়ায় সব চুল ফেলে দেয়া হয়। সেই থেকে সবাই তাকে ডাকতো ‘ন্যাড়া’ বলে। নামটি শুনে মনে পড়েই যায় ‘বিলাসী’ গল্পের কথা। পাঠ্যবইয়ের বদৌলতে প্রায় সবাই-ই পড়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ের সকল গল্পের ঝুলি নিয়ে পাঠকদের কাছে যে গল্প বলেছিলো, সে কথকের নামও কিন্তু ছিল ‘ন্যাড়া’। এই দুজন ব্যক্তিই এক। আজ আমরা বলছি বিলাসী গল্পের কথক শরৎচন্দ্রের কথা। পুরো নাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি ব্যক্তিজীবনেও সাপুড়েদের মতো পটু ছিলেন বিষধর সাপ ধরার ক্ষেত্রে।
গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ সব জায়গায়ই পাঠককূলে সমাদৃত এক সাহিত্যিক। রোম্যান্টিক ট্র্যাজেডি কিংবা সমাজ সংস্কার, আবহমান বাংলার আত্মকথা কিংবা স্যুট-ব্যুট পরা কোনো বিলেতফেরত নায়ক, আত্মত্যাগে নিজেকে বিলীন করে দেয়া নায়িকা কিংবা প্রতিবাদে মাথাচাড়া দেয়া কোনো অরক্ষণীয়া। শরৎচন্দ্র এদের সবাইকেই খুব গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন আমাদের কাছে। নারীর প্রতি বিশেষ একধরনের স্থান থাকতো শরতের গল্প-উপন্যাসে, তার সমসাময়িক অন্যদের মতো নারীকে তিনি শুধু অবলা বলেই রেখে দেননি, তাদের মুখে বুলি ফুটিয়েছেন, কিছুটা হলেও তাকে দাঁড় করিয়েছেন সমাজের স্রোতের বিরুদ্ধে। রবি ঠাকুরের হৈমন্তী যখন স্বামী সংসার আর যৌতুকের পরাকাষ্ঠার বলি হয়, শরতের বিলাসী তখনো লড়ে যাচ্ছে মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু জয়ে।
পরিবার, বন্ধু, কাউকে কিছু না জানিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বর্মা (এখন মায়ানমার) পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু জাহাজ বর্মার রাজধানী রেঙ্গুনে ঢোকার আগেই তাঁকে যেতে হল ‘কোয়ারান্টিন’-এ। সেই সময় কোনও বন্দরে সংক্রামক ব্যাধি দেখা দিলে সেখান থেকে জাহাজ অন্য বন্দরে প্রবেশের আগে জাহাজকে বন্দর থেকে কিছুটা দূরে অন্য এক জায়গায় কয়েক দিন রাখা হত। একেই বলা হয় কোয়ারান্টিন। রেঙ্গুন তখন প্লেগে ভয়ংকর বিপর্যস্ত। বর্মার সাহেবসুবোরা ধরেই নিয়েছিল, প্লেগ ছড়িয়েছে তৎকালীন বম্বের বন্দরে জাহাজে জাহাজে যে কুলিরা কাজ করে, তাদের থেকে। রেঙ্গুন ঢোকার আগেই কুলি আর ডেকের অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে শরৎচন্দ্রও গেলেন আটকে। এক জঙ্গলঘেরা জায়গায় কাটালেন নয় নয় করে সাত দিন।
অবশেষে ঢোকা গেল রেঙ্গুন শহরে। হাত একেবারে খালি। সে সময় রেঙ্গুন শহরে একটিমাত্র বাঙালি হোটেল—‘দাদাঠাকুরের হোটেল’। সেখানে থেকেই শরৎচন্দ্র তাঁর মেসোমশাই অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ঠিকানা জেনে শেষমেশ পৌঁছলেন তাঁর কাছে। অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন রেঙ্গুনের নামকরা উকিল। শরৎচন্দ্র সাত দিন আটকে ছিলেন শুনে মেসোমশাই বললেন, ‘‘তুই আমার নাম করতে পারলি না? আমার নাম করে কত লোক পার হয়ে যায়, আর তুই পড়ে ছিলিস করনটিনে!’’
বর্মি ভাষা শিখে শরৎচন্দ্র যদি বর্মায় ওকালতি করে তা হলে তাকে আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে না, এ কথা শরতের পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায়কে অঘোরবাবু আগেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু শরতের আর উকিল হওয়া হল না। কারণ, তিনি বর্মি ভাষার পরীক্ষাতেই পাশ করতে পারলেন না।
উকিল না হয়েও প্রায় তেরো বছর তিন মাস বর্মায় কাটিয়ে ফেললেন শরৎচন্দ্র। বৌদ্ধ ভিক্ষুর বেশে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন উত্তর বর্মার অলিতে-গলিতে। মিশেছিলেন চোর, ডাকাত, খুনি... হাজারও মানুষের সঙ্গে। বিচিত্র সেই সব অভিজ্ঞতা!
বর্মার নানান জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল সরকারি কন্ট্রাক্টর গিরীন্দ্রনাথ সরকারের। পেশায় সরকারি চাকুরে, কিন্তু তাঁর নেশা ছিল ভ্রমণ। শরৎচন্দ্র বর্মি ভাষা একেবারেই বুঝতে পারতেন না। গিরীনবাবুই তাঁর দোভাষীর কাজ করতেন। এক দিন দু’জনে ঘুরতে বেরিয়েছেন। রাস্তায় দেখলেন, মাছ কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে এক দল বর্মি মেয়ের সঙ্গে কিছু লোকের ঝগড়া হচ্ছে। গিরীনবাবুকে জিজ্ঞেস করে শরৎচন্দ্র জানলেন, বর্মায় মরা মাছের খুব কদর। জ্যান্ত মাছ মেরে খাওয়া নাকি ওদের কাছে অধর্ম। ব্যাপারটা জেনে শরৎচন্দ্র বলেছিলেন, ‘‘তা হলে দেখছি একদিন গুচ্ছের মাছ মেরে ওদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে।’’ উত্তরে গিরীনবাবু বললেন, ‘‘উহুঁ, ওরা এমনি এমনি নেওয়ার পাত্র নয়, যা নেবে পয়সা দিয়ে নেবে। আর যদি বোঝে মতলব খারাপ, সঙ্গে সঙ্গে ফনানে-ছা। মানে জুতোপেটা!’’
শোনা যায়, প্রণয়ঘটিত ব্যর্থতার যন্ত্রণা ভুলতে প্রথম জীবনে হাতে পয়সা পেলেই শরৎচন্দ্র বেজায় মদ্যপান করতেন। মাঝে মাঝে মদ খেয়ে বেহুঁশও হয়ে পড়তেন। এক দিন শরৎচন্দ্রের বাড়িতে মদ শেষ। কী করা যায়? গভীর রাতে এক বাঙালি বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে চললেন তাদেরই পরিচিত এক বর্মি বন্ধুর বাড়ি মদ আনতে। বর্মি বন্ধুটির হার্টের অসুখ থাকায় তাঁর মদ খাওয়া নিষেধ ছিল। অনেক অনুরোধের পর বন্ধুর স্ত্রী মদের বোতল বের করে দিলেন। এ দিকে শরৎ ও অন্য বন্ধুদের কী খেয়াল হল, তাঁরা মদ খেতে বসে পড়লেন ওই বর্মি বন্ধুর বাড়ির বারান্দাতেই। মদ খাবে না, এই শর্তে সেও আসরে যোগ দিল। স্ত্রীর নজরদারিতে গোড়ায় মদ না খেলেও, স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়লে বন্ধুদের অনুরোধে যথারীতি মদের গ্লাসে চুমুকও দিয়ে ফেলল। তার কিছু ক্ষণ পরেই হঠাৎ বুক চেপে ধরে বিকট আর্তনাদ, এবং মৃত্যু!
এর পর শরৎচন্দ্র মদ ছে়ড়ে আফিম ধরেছিলেন। যে নেশা তাঁর জীবনের শেষ দিন অবধি ছিল। ভাল গান গাইতেন, শরতের গানে মুগ্ধ হয়ে কবি নবীনচন্দ্র সেন তাঁকে ‘রেঙ্গুন রত্ন’ উপাধি দিয়েছিলেন।
রেঙ্গুনের যৌনপল্লিতেও নাকি শরৎচন্দ্রের যাতায়াত ছিল। এক বার একটি মেয়ের কাছে গিয়ে দেখলেন, তার বসন্ত রোগ হয়েছে। তা দেখে বন্ধুরা সকলে ভয়ে পালিয়ে গেলেও শরৎচন্দ্র কিন্তু পালালেন না। পয়সা খরচ করে ডাক্তার ডাকলেন, মেয়েটির চিকিৎসা করলেন। এত কিছু করা সত্ত্বেও মেয়েটি বাঁচল না। শরৎচন্দ্র মেয়েটির সৎকারও করেছিলেন।
রেঙ্গুনে বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন লোয়ার পোজনডং-এর এক মিস্ত্রিপল্লিতে। সেখানকার মানুষজনের আপদে-বিপদে সাহায্য করা, অসুখে হোমিয়োপ্যাথি ওষুধ দেওয়া, সব মিলিয়ে শরৎচন্দ্র হয়ে উঠেছিলেন মূর্তিমান মুশকিল আসান। শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয়তা দেখে বন্ধু গিরীন মিস্ত্রিপল্লিকে মজা করে বলতেন ‘শরৎপল্লি’।
এই মিস্ত্রিপল্লিতেই এক অসহায় মেয়েকে সাহায্য করতে গিয়ে শরৎচন্দ্র বিপদে পড়েছিলেন। ওই পল্লিতে থাকত এক দম্পতি। বছরখানেক পর মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়লে যুবকটি তাকে ছেড়ে পালায়। মেয়েটির প্রসব বেদনা উঠলে স্থানীয় লোকজন গেলেন শরৎচন্দ্রের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করতে। শরৎচন্দ্র সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার ডাকলেন। সন্তান প্রসবের পর মেয়েটির দুঃখের কাহিনি শুনলেন ও যুবকটির খোঁজে লোক লাগালেন। খোঁজ পাওয়ার পর শরৎচন্দ্র লোক মারফত যুবকটিকে বলে পাঠালেন, সে যেন তার স্ত্রী ও সন্তানকে গ্রহণ করে। যুবকটি কিন্তু মেয়েটিকে তাঁর স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করল। তারা যে বিবাহিত ছিল না সেটাও জানা গেল। ছেলেটি তখন অন্য এক জায়গায় সংসার পেতেছে।
শুনে বেজায় চটলেন শরৎচন্দ্র। অসহায় মেয়েটিকে বললেন, যুবকের বিরুদ্ধে খোরপোশের মামলা করতে। মামলা কোর্টে উঠলে যুবকটি বলল, মেয়েটির সঙ্গে শরৎচন্দ্রের সম্পর্ক আছে। সদ্যোজাত সন্তানটি তার নয়, শরৎচন্দ্রের। আর সন্তান প্রসবের সময় সে কারণেই নাকি শরৎচন্দ্র খরচাপাতি করে ডাক্তার আনিয়েছিলেন। বিচারক সব শুনে ডাক্তারের বয়ান নিলেন। ডাক্তার জানালেন, শরৎচন্দ্র তাঁকে ডাকলেও প্রসবের সময় মেয়েটি তার স্বামীর নাম, মানে ওই যুবকটির নামই করেছিল। যে নাম তার ডায়েরিতে লেখা আছে। বিচারক সিদ্ধান্ত শোনালেন। যুবকটি খোরপোশ দিতে বাধ্য হল।
রেঙ্গুনের বাড়িতে ছিল তাঁর নিজস্ব একটি লাইব্রেরি। কাঠের এই বাড়িটি তিনি কিনেছিলেন এক ইউরোপীয় সাহেবের কাছ থেকে। এক বার আগুন লাগল সেই বাড়িতে। পুড়ে ছাই হয়ে গেল সব কিছু। তার মধ্যেই ছিল ‘চরিত্রহীন’ উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি এবং তাঁর নিজের আঁকা বেশ কিছু পেন্টিংও। সব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে শরৎচন্দ্র পথে এসে দাঁড়ালেন, কুকুর ‘ভেলি’ আর পোষা কাকাতুয়া ‘বাটুবাবু’র সঙ্গে।
আক্রান্ত হলেন রোগে। হাত-পা ফুলে যাচ্ছে, যন্ত্রণা। অবস্থা এমন, প্রায়-পঙ্গু পা নিয়ে চলাফেরাই করতে পারেন না। ডাক্তার জানালেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণেই এই দশা, বর্মা ছাড়লে তবেই এ রোগ সারবে। এ দিকে চিকিৎসার জন্য ছুটি চাওয়া নিয়ে অফিসে বড়সাহেবের সঙ্গে বচসা বাধল। শরৎচন্দ্র খুব উত্তেজিত হয়ে তেড়ে গেলেন সাহেবের দিকে। বাঙালি কেরানির ঔদ্ধত্য দেখে সাহেব স্তম্ভিত!
সে দিনই কাজে ইস্তফা দিলেন শরৎচন্দ্র। ফিরলেন দেশে। দেশে ফিরে চেহারায় বদল আনলেন। রেঙ্গুনে থাকার সময় দাড়ি রেখেছিলেন। ঘন ঘন সিগারেট খেতেন। খেলতেন দাবা। জীবনচর্চায় ছিল ফরাসি বোহেমিয়ানিজমের প্রভাব। তখন তাঁর গুরু ফরাসি সাহিত্যিক এমিল জোলা। বর্মা থেকে ফেরার কয়েক বছর পর দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে ফেললেন। শুরু হল আর এক নতুন জীবন।
বাংলা কথাসাহিত্যে ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শরৎচন্দ্র পাঠ করেন নি এমন শিক্ষিত বা মোটামুটি লেখাপড়া জানা বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। ব্যাপারটা আরও একটু পরিষ্কার করে লেখা যেতে পারে, পৃথিবীর যে কোনো বাংলাভাষীর সঙ্গে শরৎচন্দ্রের পরিচয় হয়েছে; না হয়ে উপায় নেই। এতো গল্প, এতো উপন্যাস আর এতো আশ্চর্য চরিত্র তিনি তৈরি করেছেন- সেইসব চরিত্র বা আখ্যান পাঠ না করে এড়িয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব, যে কোনো বাঙালির পক্ষে।
কবিগুরু যথার্থ বলেছিলেন "শরৎচন্দ্রের সৃষ্টি ডুব দিয়েছে বাঙালির হৃদয়রহস্যে| সুখে দুঃখে মিলনে বিচ্ছেদে সংঘটিত বিচিত্র সৃষ্টির তিনি এমন করে পরিচয় দিয়েছেন বাঙালী যাতে আপনাকে প্রত্যক্ষ জানতে পেরেছে।"
রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে শরৎচন্দ্রের মৃত্যুসংবাদ শুনে ইউনাইটেড প্রেসের প্রতিনিধিকে বলেন-‘ যিনি বাঙালীর জীবনের আনন্দ ও বেদনাকে একান্ত সহানুভূতির দ্বারা চিত্রিত করেছেন, আধুনিক কালের সেই প্রিয়তম লেখকের মহাপ্রয়াণে দেশবাসীর সঙ্গে আমিও গভীর মর্মবেদনা অনুভব করছি’।
এর কয়েকদিন পরে ১২ই মাঘ তারিখে কবি আবার শরৎচন্দ্রের মৃত্যু সম্পর্কে এই কবিতাটি লিখেছিলেন-
যাহার অমর স্থান প্রেমের আসনে।
ক্ষতি তার ক্ষতি নয় মৃত্যুর শাসনে।
দেশের মাটির থেকে নিল যারে হরি
দেশের হৃদয় তারে রাখিয়াছে বরি।
শরৎচন্দ্র সৃষ্ট রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত-ইন্দ্রলাল, রমা-রমেশ, সব্যসাচী, বড়দিদি, সতীশ-সাবিত্রী, বিলাসী সহ আরো বহু অমর চরিত্র বাংলা সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধতর। তার শক্তিশালী লেখনী ও সমাজকদে ভিন্নভাবে দেখবার চোখ সাহিত্যজগতে যুক্ত করেছে বহু কালজয়ী রচনা, যার আবেদন পাঠকসমাজে বছরের পর তাকে জীবিত রাখবে একজন অপরাজেয় কথাশিল্পীর পরিচয়ে।
মনুষ্যত্বের মরণ যাকে আহত করত নিয়ত , আজন্ম অসাম্প্রদায়িক,নারীর প্রতি বৈষম্যকে আঘাত করেছেন তীব্রভাবে , বাঙালির চিরন্তন আবেগ , প্রেম , বেদনা, আটপৌরে জীবনের অনিন্দ্য কথাকার শরৎবাবু...
লেখক: লুৎফুল কবির রণী, কবি ও প্রাবন্ধিক
No comments:
Post a Comment