‘ভবা পাগলার’ আসল নাম ‘ভবেন্দ্র মোহন সাহা’। তাঁর জন্ম আনুমানিক ১৮৯৭ খৃস্টাব্দে। তাঁর পিতার নাম ‘গজেন্দ্র কুমার সাহা’। ভবা পাগলারা ছিলেন তিন ভাই এক বোন। তিনি দেখতে ছিলেন একরকম হালকা পাতলা গড়ন, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, মাথায় ঝাঁকড়া চুল, চিবুকে এক গোছা দাঁড়ী। গানের ভণিতায় তিনি নিজেকে ভবা বা ভবেণ বলে উল্লেখ করেছেন। মানিকগঞ্জ অঞ্চলে তিনি ভবা পাগলা নামে খ্যাত। তাঁর গান মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ও অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছিল অনেক আগেই। অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ‘বাংলার বাউল ও বাউল গানে’ তাঁর দুটি গান ছেপেছিলেন। মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ‘হারামণির সপ্তম খণ্ডে’ ভবা পাগলা সম্পর্কে লিখেছেন, ভবা পাগলা এক জন নামকরা বাউল গান রচয়িতা। তিনি সাটুরিয়া থানার (বর্তমানে উপজেলা) অন্তর্গত আমতা গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। স্বাধীনতার পর (অর্থাৎ ১৯৪৭ এর পর ১৯৫১) তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তাঁর গান মানিকগঞ্জ জেলা সহ বাংলাদেশ ও ভারতে বিভিন্ন স্থানে পরিচিতি লাভ করে ও গীত হয়ে আসছে। তিনি মূলত শ্যামা সঙ্গীত, ভাব গান, গুরুতত্ত্বের গান, দেহতত্ত্বের গান, ও সৃষ্টিতত্ত্বের গান রচনা এবং সুর নিজেই করেছেন। তিনি ১৯৪৭-এ ভারতে চলে যান এবং বর্ধমানে কালনাতে অবস্থান করতেন। ভবা পাগলা ১৯৮৪ খৃস্টাব্দে দেহ ত্যাগ করেন।
ভবা পাগলা প্রতিষ্ঠিত ভবানী মন্দিরের বাৎসরিক উৎসব হয় বৈশাখের শেষ শনিবার। কালনা শহরের জাপট এলাকায় অবস্থিত এই মন্দিরে উৎসব উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন। দেখা মেলে বিদেশীদেরও। মন্দির প্রাঙ্গণে বসে মেলার আসর। মন্দির প্রতিষ্ঠা করার পরেই বৈশাখের শেষ শনিবার বিশেষ উৎসব শুরু করেছিলেন ভবা পাগলা। তারপর থেকে প্রতি বছরই বৈশাখ মাসের শেষ শনিবার এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এই মন্দিরে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৫১ সালে বাংলাদেশ থেকে জাপট গ্রামে এসে ভবানী মন্দির তৈরি করেছিলেন ভবা পাগলা। শুধু সাধন-ভজনই নয়, এই মন্দির ছিল তাঁর সাহিত্য চর্চার জায়গাও। এই মন্দিরে বসেই তিনি অনেকগুলি গান ও কবিতা লেখেন। তাঁর ভক্তদের দাবি, এখনও পর্যন্ত ভবা পাগলার ২৫ হাজার গানের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। প্রতি বছরই উৎসবের আগেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে সাধু-সন্তরা আসতে শুরু করেন। কোন বারই তার ব্যতিক্রম হয়নি। মন্দির প্রাঙ্গনেই তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এসেছিল বাউল, কবিয়াল ও কীর্তনের দল। মন্দির সংলগ্ন মঞ্চে বসে শিল্পীরা ভবা পাগলার গান শোনান, হয় ধর্মসভা। ভক্তদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রসাদ। বর্তমানে মন্দির ও উৎসবের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন সাধক কবির নাতিরা।
-
---- তাঁর লেখাা একটি গান ------
-
নদী ভরা ঢেউ বোঝ না তো কেউ
কেন মায়ার তরী বাও বাও গো
ভরসা করি এ ভব কাণ্ডারী
অবেলার বেলা পানে চাও চাও রে .....
বাইতে জান না কেন ধর হাল
মন মাঝিটা তোর হল রে মাতাল
বুঝিয়া বলো তারে
যেতে হবে পারে
হালটি ছাড়িয়া এখন দাও দাও রে .....
বাইতে ছিল তরী পাগলা ভবা
ভাঙা তরী জলে জলে ডুবা ডুবা ..
চুবানি খেয়ে ধরেছে পায়ে
ওরে কাণ্ডারি এখন বাঁচাও বাঁচাও রে .............
No comments:
Post a Comment